মো. মুন্না মিয়া, সিলেট
ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে সিলেটের নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকায় উপচে পড়ছে পানি। নতুন করে বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢুকছে। এমন অবস্থায় বন্যাকবলিত পরিববারগুলো দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভোগের আশঙ্কা করছে। ফলে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেট নগরের ৮ থেকে ১০টি এলাকা ছাড়াও জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও সদর উপজেলার অন্তত ৫০০ গ্রাম এরই মধ্যে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কয়েক লক্ষাধিক লোকজন পানিবন্দী রয়েছেন। এসব এলাকার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। বন্যার পানিতে নগর সহ জেলার অসংখ্য রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়িতে ঢুকে পরেছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় অনেকে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামের সংযোগসড়ক দুদিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে। এসব রাস্তা দিয়ে যানবাহনের বদলে মানুষজন নৌকায় চলাচল করছেন। নগর ও ৬ উপজেলায় অন্তত চার থেকে সাড়ে চার লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন বলে বানভাসিরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট নগরের উপশহর, তালতলা, কালিঘাট, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, তেররতন, ঘাসিটুলাসহ অন্তত ১০টি এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষজন ভোগান্তি নিয়ে পথ চলছেন। অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি উঠেছে। এরই মধ্যে কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে হাঁটুপানি। ঘরের ভেতরে পানি ওঠায় অনেকে নিরাপদে সরে যাচ্ছেন। সিলেটের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কালীঘাটের বিভিন্ন দোকান তলিয়ে যাওয়ায় সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
নগরের ঘাসিটুলা এলাকার একটি কলোনির বাসিন্দা কাদির আহমদ জানান, একমাসের মধ্যে দ্বিতীয়বাবের মতো তার বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে।
তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ। বারবার এইভাবে ঘরে পানি ঢুকে পড়লে যাবো কই? ঘরের জিনিসপত্রও নষ্ট হয়ে যায় পানিতে।
সিলেটের জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত আমরা ২৯৮ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দিয়েছি। নগদ সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি।
বন্যাদুর্গতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলার সবকটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন প্রবেশ করেছেন। তাদের সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি আমরা।
এদিকে, সিলেটের নদনদীর পানির সর্বশেষ আপডেট জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের মতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত বিপদসীমা অতিক্রম করা সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে পানিসীমা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.০৮ মিটারে। যার ডেঞ্জার লেভেল ১০.৮০ মিটার। একই সময়ে এ নদীর কানাইঘাট পয়েন্টের পানিসীমা ১৩.৭২ মিটার। এ পয়েন্টের ডেঞ্জার লেভেল ১২.৭৫।
কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে পানিসীমা দাঁড়ায় ১৪.৯৮ মিটারে। এ নদের শেওলা পয়েন্টে একই সময় পানিসীমা ছিল ১২.৫৬ মিটার। কুশিয়ারা নদীর শেরপুর পয়েন্টে পানি বেড়েছে। এখানে আজ দুপুর ১২টায় পানিসীমা ছিল ৭.৭০ মিটার। এ নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টেও পানি বেড়েছে। পানিসীমা বিপদসীমার উপর দিয়ে অতিবাহিত হয়ে পানিসীমা দাঁড়ায় ৯.৭৭ মিটারে।
লোভাছড়া পয়েন্টে লোভা নদীর পানি কমেছে। ০.১৪ পয়েন্ট কমে পানিসীমা ১৪.১৭ মিটারে দাঁড়িয়েছে।
সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেও গতকালের চেয়ে ০.২ পয়েন্ট কমেছে। আজ দুপুর ১২ টায় পানিসীমা দাঁড়িয়েছে ১২.৮২ মিটারে।
ধলাই নদীর ইসলামপুর পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১১.৯৮ মিটারে দাঁড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) দুপুর পৌণে ১ টায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি ক্রমশ বাড়ছে। তবে দুয়েকটা নদীর পানি নামমাত্র দশমিক পয়েন্ট পানি কমছে।