তিন গুণ বেশি বন্দী নিয়ে ধুঁকছে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার




নয়ন দাস,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ

ধারণক্ষমতার তিন গুণেরও বেশি বন্দী, টয়লেট সংকটসহ নানা সমস্যায় ধুঁকছে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার। সংকট উত্তরণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার লিখিত প্রতিবেদন দিলেও সমাধান মিলছে না। তবে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আশা প্রকাশ করে বলেছেন, শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান হবে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে চারটি পুরুষ ও দুটি নারী ওয়ার্ড মিলে মোট বন্দী ধারণক্ষমতা ১৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ বন্দী ধারণক্ষমতা ১৪৫ এবং নারী বন্দী ধারণক্ষমতা ১৮। কিন্তু ১৯৮৭ সালে জেলা কারাগার হিসেবে যাত্রা করা এই কারাগারে সব সময়ই ধারণক্ষমতার বেশি বন্দী থাকেন। বন্দীর সংখ্যা বাড়লেও কারাগারের ধারণক্ষমতা বাড়ানো হয়নি। 

গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত কারাগারে বন্দী ছিল ৫৪৫ জন, যা ধারণক্ষমতার তিন গুণেরও বেশি। এর মধ্যে পুরুষ বন্দী ৫১৭ জন এবং নারী বন্দী ২৮ জন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারা সদস্য জানান, নির্ধারিত ওয়ার্ডগুলোতে ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি বন্দী থাকায় কারা অভ্যন্তরে ন্যূনতম মানবিক পরিবেশ থাকছে না। দিনের বেলা বন্দীরা ওয়ার্ডের বাইরে ঘোরাফেরা করলেও বিকেল হতেই তাদের ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে হয়। আবার ধারণক্ষমতার তিন গুণ বন্দী থাকায় বন্দীদের ঘুমানোর পরিবেশও থাকছে না। ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বন্দীরা। 

এদিকে আবাসনের পাশাপাশি কারাগারে টয়লেটের সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০০ থেকে ১৫০ জন বন্দীর বিপরীতে টয়লেট রয়েছে মাত্র একটি। আর চার ওয়ার্ডের বন্দীদের জন্য দিবা টয়লেট রয়েছে মাত্র ২০টি। ফলে বন্দীরা মানবিক সংকটে ভুগছেন। 

আবাসন ও টয়লেটের সংকটের কথা স্বীকার করে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারের জেলার আবু ছায়েম বলেন, ‘কুড়িগ্রাম কারাগারে সব সময় ধারণক্ষমতার বেশি বন্দী থাকে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেও সমস্যার বিষয়টি অবগত হয়েছেন। বন্দীদের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ ও আধুনিকায়নের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মন্তব্যসহ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।’ 

সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া একাধিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আসামি বলেন, ‘জেলের ভেতরে থাকার কোনো পরিবেশ নেই। ওয়ার্ডগুলোতে শুয়ে কেউ পাশ ফিরবে এমন অবস্থাও নেই। যারা জেলে থাকে তাদের সবাই অপরাধী না। মানুষের জন্য ন্যূনতম যে সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, তার কোনোটাই পাওয়া যায় না। গাদাগাদি করে থাকতে হয়। টয়লেটে যেতে হলেও দীর্ঘ সিরিয়াল লাগে।’ 

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘কারাগারের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান হবে।’ 

প্রসঙ্গত, উপকারাগার হিসেবে যাত্রা শুরু করা কুড়িগ্রাম কারাগারটি ১৯৮৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জেলা কারাগারে রূপান্তরিত হয়। প্রায় ১৬ একর জায়গা নিয়ে গঠিত এই কারাগারের অভ্যন্তরীণ আয়তন (মূল কারাগার) ৩ দশমিক ৮৬ একর।

*

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم