"চাই ইতিবাচক চিন্তা"- ডা. ফারহানা মোবিন



চাই ইতিবাচক চিন্তা- লিখেছেন জেনারেল ফিজিশিয়ান ডা. ফারহানা মোবিন


দুঃখ ছাড়া কোন জীবন হয়না!

প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু অপূর্ণতা থাকে!!


কোন মানুষ শতভাগ সুখী নয়। অধিকাংশ মানুষকে বাহির থেকে হাসি খুশী মনে হলেও সবাই শতভাগ সুখী নয়।

একেজন মানুষের রয়েছে একে রকম না পাওয়া। আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে, এই না পাওয়া গুলোকে ভুলে, আমরা কিভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারবো; আমাদেরকে সেই চেষ্টাই করতে হবে।


মনকে ভালো রাখবার জন্য সব সময় ইতবাচক চিন্তা করতে হবে। আমাদের মন যতো বেশি ভালো থাকবে, আমরা মানসিকভাবে হবো ততোটাই শক্তিশালী, মানসিক শক্তি বাড়ানোর জন্য আমাদের প্রবল ইচ্ছে শক্তিটা ভীষণ জরুরী।

ধর্ম, কর্ম, ইয়োগা, ধ্যান, মেডিটেশান, সৃজনশীল কাজ, নিজেকে জনকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত রাখতে পারলে আমরা ভালো থাকবো। এই ধরণের কাজগুলো বাড়িয়ে তোলে আমাদের মানসিক শক্তি।

চেষ্টা করতে হবে জীবিকার পাশাপাশি সৃজনশীল কাজ বা আত্মউন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার জন্য। তাহলে মনের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তা, হতাশা দুঃখ কষ্ট সহজে মনকে দূর্বল করতে পারবে না।

আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন, নিয়মিত ধর্ম কর্ম, মেডিটেশান, ধ্যান আপনাকে দিবে মানসিক প্রশান্তি। প্রতিটি ধর্মের প্রার্থনায় ধ্যান বিষয়টা কিছুটা হলেও চলে আসে। তাই নিয়মিত ধর্ম কর্ম করলে মস্তিষ্কের বিশ্রাম হয়।

মস্তিষ্কের বিশ্রাম হলে মানুষের মস্তিষ্ক কর্মক্ষম হয়ে ওঠে দ্বিগুণ পরিমাণে। আমাদের মাথার মধ্যে রয়েছে অগণিত শিরা উপশিরা স্নায়ু। 

এই শিরা, উপশিরা স্নায়ুগুলো আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, তখনও কাজ করতে থাকে।

তবে জেগে থাকা অবস্থায় মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো কাজ করে তুলনামূলকভাবে বেশি।

মাতৃগর্ভে থাকা কালিন সময় থেকেই একটি শিশুর মস্তিষ্ক তৈরী হতে থাকে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকে মস্তিষ্কের বিরামহীন যাত্রা। আমরা যখন প্রার্থনা, ধ্যান বা মেডিটেশান করি তখন আমাদের মস্তিষ্কের শিরা উপশিরা ও স্নায়ুগুলোর বিশ্রাম হয়।

অনেক কাজ করার পরে মানুষের যেমন বিশ্রাম প্রয়োজন, ঠিক তেমনি আমাদের মস্তিষ্কেরও বিশ্রাম প্রয়োজন। আমাদের মস্তিষ্কে রয়েছে মাকড়শার জালের মতো অসংখ্য স্নায়ু।

এই স্নায়ুগুলো মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত।  স্নায়ুগুলো যতো বেশী কর্মতৎপর হবে, আমরা ততো বেশী কর্মক্ষম হয়ে উঠবো।

এই জন্য ইতিবাচক চিন্তা, ধর্ম, কর্ম, ভালো লাগার কাজগুলো ভীষণ জরুরী।

আমাদের রক্তে হরমোন নামে রয়েছে ভীষণ জরুরী এক উপাদান। হরমোনগুলো সংখ্যায় একাধিক এবং প্রতিটি হরমোন দেহের জন্য পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সৃজনশীল কাজ, ধর্ম, কর্ম, ইয়োগা, মেডিটেশান আমাদের রক্তে সেরোটোনিন নামের এক ধরণের হরমোন লেভেলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোনের মাত্রা রক্তে বৃদ্ধি পেলে, মানুষ কাজে উৎসাহ পায়। মানুষের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।

জীবনে ব্যর্থতা থাকবেই। আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে, বার বার ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। জীবনের ধ্বংসস্তুপের মাঝেও ইতিবাচক চিন্তা আমাদেরকে দিবে মানসিক শক্তি। জোর করে মন ভালো করার চেষ্টা করতে হবে। যতো বেশী হতাশা বিষন্নতা আমাদেরকে গ্রাস করবে, আমরা ততোটাই এগিয়ে যাবো ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের দিকে।

পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ সহ বর্তমানে বাংলাদেশেও অসংখ্য তরুণ তরুণী ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত। এর অন্যতম প্রধান কারণ দুঃখ, কষ্ট, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, হতাশা, বিষন্নতা। বছরের পর বছর হতাশায় আক্রান্ত হবার জন্য আমাদের সমাজে অনেকেই মানসিক রেগের শিকার। যা অনেক সময় ধরা পড়েনা।

মানসিক রোগ অনেক সময় চূড়ান্ত পর্যায়ে যেয়ে ধরা পড়ে। এই ধরণের পরিণতি থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য আমাদেরকে নিজেকে ভালোবাসতে হবে। নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখবার জন্য সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে।

আপনার সৃজনশীল কোন কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকলে, আপনি সেই কাজগুলো করার চেষ্টা করবেন। ইউটিউবে বিভিন্ন ধরণের আত্মউন্নয়নমূলক ভিডিও আছে। এই ধরণের ভিডিওগুলো বাড়িয়ে তুলবে আমাদের মানসিক শক্তি। বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে বক্তৃতা দিয়েছেন বা তাদের সাক্ষাৎকারগুলো দেখলেই আমরা উপলব্ধি করতে পারবো যে, তারা কতোটা দুঃখ, কষ্টকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেছেন। পৃথিবীর অসংখ্য মনীষীরা সীমাহীন যুদ্ধ করে, অনেকেই চরম অভাব দারিদ্রতা জয় করে সফল হয়েছেন। ইতিহাসের পৃষ্ঠায় লিখিয়েছেন তাঁদের নাম। তাদের জীবনী পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে, তারা প্রায় সবাই ছিলেন ইতিবাচক চিন্তার মানুষ। ইতিবাচক চিন্তা মানুষের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তোলে কয়েক গুণ।

আমরা চোখের পানি লুকিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করবো। জীবনযুদ্ধে আমাদেরকে সফল হতেই হবে।

*

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم