সিলেটে করোনা রিপোর্ট নিয়ে প্রবাসীদের সাথে প্রতারণা: প্রকাশ্যে কাজ করছে একটি চক্র

সিলেটে করোনা রিপোর্ট নিয়ে প্রবাসীদের সাথে প্রতারণা: প্রকাশ্যে কাজ করছে একটি চক্র


সিলেট প্রতিনিধি: 

দ্বিতীয় লন্ডন নামে খ্যাত বাংলাদেশের একটি বিভাগীয় শহর সিলেট। আদি যুগ থেকে এই সিলেটের মানুষের ঝুক ইউরোপের দিকে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ইউরোপে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে ৭০% সিলেট বিভাগের। আর এই সিলেটে ইউরোপ প্রবাসীদের টার্গেট করে একটি চক্র প্রতিনিয়ত প্রতারণার জাল বুনছে। কেউ কেউ শিকার হচ্ছেন মোবাইল ফোনে প্রতারণায় আবার কেউ শিকার হচ্ছেন সরাসরি। 


গত ২০শে জানুয়ারী এমন এক প্রতারণার শিকার হয়েছেন লন্ডন প্রবাসী এক নারী। জানা যায়,গত ১৮ই জানুয়ারী করোণা টেষ্টের রেজিষ্ট্রেশনের জন্য উপশহরস্থ সীমান্তিক করোণা ল্যাবে আসেন মাহমুদা বেগম বাছিত সহ আরো দুইজন লন্ডন প্রবাসী। এই সময় মাহমুদা বেগম বাছিতের করোণা লক্ষণ থাকায় তিনি সীমান্তিক ল্যাবের সম্মুখের বেনামী একটি দোকানে করোণা পরীক্ষার ফরম পূরণ করেন। দোকানে থাকা আলীম নামে এক যুবক করোণা রিপোর্ট পজেটিভ আসলে ৩৫০০০ হাজার টাকার বিনিময়ে নেগেটিভ করে দিবেন বলে তাহার সাথে চুক্তিবদ্ধ হোন। ২০শে জানুয়ারী   মাহমুদা বেগম ও তার পরিবারের বাকী ২ সদস্য নিয়ম অনুযায়ী করোণা পরীক্ষা করতে আসেন। করোণা নমুনা সীমান্তিক ল্যাবে দিয়ে তিনি বাসায় চলে যান। ঐদিন বিকেলে মাহমুদা বেগমের রিপোর্ট ছাড়া বাকী দুইজনের রিপোর্ট নেগেটিভ চলে আসে কিন্তু মাহমুদা বেগমের রিপোর্ট না আসায় তিনি বার বার আলীমকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ না করে অফিসে ব্যস্ত আছেন বলে ম্যাসেজ পাঠান এবং রিপোর্ট কিছুক্ষণের মধ্যে পাবেন বলে স্বান্তনা দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষায় রাখেন। এক পর্যায়ে সন্ধ্যার পরপরই মাহমুদা বেগমের করোণা পজেটিভের ম্যাসেজ আসলে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। এরপর বার বার আলীমের মোবাইলে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় মাহমুদা বেগম তার পরিবারের আরো দুইজনকে নিয়ে আলীমের দোকানে এসে তাকে খোজ করতে থাকেন। ততক্ষণে আলীম পালিয়ে গেলে তারা সীমান্তিক ল্যাবে এই ব্যাপারে কথা বলতে যান। এ সময় ল্যাবের ম্যানেজার মোবারক করিমকে বিষয়টি অবগত করিলে আলীমের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তিনি আলীমের ছোটের বোনের জামাই হাবিবকে ডেকে এনে বিষয়টি সুরাহার জন্য বলেন। এ সময় হাবিব তার সমুন্দিকে ফোন করে এনে মেন্দিবাগস্থ  ছালিক ম্যানশনের নীচে তার আরকটি দোকানে পাঠিয়ে গোপনে টাকা ফেরত দেন।


এই ব্যাপারে হাবিব হোসেনকে ফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান,এই রকম কোন ঘটনা তার সাথে ঘটে নি। এইসব ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তিনি সীমান্তিকের ভিতরে কাজ করেন এবং তিনি সীমান্তিকের একজন ষ্টাফ। 


সীমান্তিকের ল্যাব ম্যানেজার মোবারক করিম জানান, করোণা পজেটিভকে নেগেটিভ করে দেয়ার জন্য একজন যুবক এক মহিলার কাছ থেকে ৩৫০০০ টাকা নিয়েছেন এবং এই বিষয় নিয়ে আমাদের কাছে হয়রানীর শিকার হওয়া নারী এসেছিলেন। আমরা আলীমের দোকানের মালিক হাবিবকে ডেকে এনে বিষয়টি অবগত করে সুরাহার জন্য বলি।


এই ব্যাপারে আলীমের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।


সীমান্তিক করোণা ল্যাবের ডেপুটি ডায়রেক্টর হুমায়ুন কবীরকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান,হাবিব আমাদের কোন ষ্টাফ না। সে আমাদের এইখানে করোণা পরীক্ষার ফি কালেকশন করে।


সিলেট সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স অফিসার আসাদ্দুজ্জামান জানান,সিটি কর্পোরেশনের ভিতরে কেউ ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই তাকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে এইসব দোকানকে লাইসেন্স করার জন্য একাধিকবার অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা বিষয়টি দেখছি।


উল্লেখ্য যে, হাবিব হোসেন নিজেকে দৈনিক স্বাধীন বাংলার সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। তার সাথে এই বিষয়ে কথা বলার পর সিলেটের একটি দৈনিক পত্রিকা বিজয়ের কন্ঠের সম্পাদক কাজল খান প্রতিবেদককে ফোন করে বিষয়টি নিয়ে জানতে চান। বিষয়টি জানার পর তিনি প্রতিবেদককে তার অফিসে বসার প্রস্তাব দেন। এতে প্রতিবেদক নারাজ হলে তিনি যেকোন এক জায়গায় বসার প্রস্তাব দেন। এ সময় প্রতিবেদক বন্দর বাজারে একটি মিষ্টির দোকানে দেখা করেন এবং কাজল খান বলেন হাবিব আমার পত্রিকার ষ্টাফ। আমি তার (হাবিব) কাছ থেকে শুনেছি,সে স্বীকার করেছে ঘটনা সত্য। আমি তাকে ডেকে এনে বিষয়টি সমাধান করে দেই। এই সময় প্রতিবেদক তার প্রস্তাবে নারাজ হলে অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে যান কাজল খান এবং চেয়ার ছেড়ে উঠে প্রতিবেদকের সাথে দূর্ব্যবহার করেন।


এদিকে করোণা রিপোর্ট নিয়ে প্রতারণার ঘটনার সূত্র ধরে প্রতিবেদক হাজির হোন উপশহরস্থ সীমান্তিকের ল্যাবের সম্মুখে। এই সময় খোজ নিয়ে জানা যায়,হাবিবের হাতে গড়া একটি চক্র এইখানে প্রতিনিয়ত মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। হাবিব সীমান্তিকের ভিতরে টাকা সংগ্রহের বুথ থেকে খদ্দের সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দেন তার বেনামী দোকানগুলোতে। সেইখান থেকে প্রবাসীদের করোণা রিপোর্ট পজেটিভ আসলে নেগেটিভ করে দিবেন বলে চুক্তিতে ১০০০০-১৫০০০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। পরবর্তীতে করোণা নেগেটিভ আসলেও তিনি নেগেটিভ করে দিয়েছেন বলিয়া সব টাকা হালাল করে নেন। তাছাড়া করোণা পরীক্ষার ফরম প্রিন্টের নামে জনপ্রতি ১০০ টাকা এবং রিপোর্ট প্রিন্টের নামে ১০০ টাকা করে হাতিয়ে নেন হাবিবের চক্র

*

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم