মোঃ আব্দুল হাই, নিজস্ব প্রতিবেদক
জগন্নাথপুরে ক্রিকেটের গোড়াপত্তনকারী প্রভাষক জাহাঙ্গীর চৌধুরী এক জীবন্ত কিংবদন্তি। জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেলতলা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৫৯ সালে জন্ম গ্রহন করেন জাহাঙ্গীর চৌধুরী। তার গর্বিত পিতা মরহুম আবুল বাশার চৌধুরী তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সুবেদার ছিলেন। স্বাধীনতার পরবর্তী পর পর চার বার রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নির্লোভ একজন সৎ ব্যক্তি হিসেবে আবুল বাশার চৌধুরীর সুনাম রয়েছে। পিতার চাকুরীর সুবাদে জাহাঙ্গীর চৌধুরী শৈশবকাল অতিবাহিত হয় পাকিস্তানের পেশওয়ার এলাকায়। সেই সময় থেকে তিনি ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। তিনি নওশেয়ার ক্যান্টনমেন্ট হাইস্কুলে ইন্টার-স্কুল টুর্নামেন্ট-এর একজন অলরাউন্ডার হিসেবে কৃতিত্বের সাথে খেলেন। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর জাহাঙ্গীর চৌধুরী সিলেট সরকারী পাইলট স্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এস এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে মুরারী চাঁদ কলেজে ভর্তি হন। তিনি তখনকার সময়ে এমসি কলেজের ক্রিকেট দলের একজন খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯৭৬ সালে কৃতিত্বের সাথে এইচ এস সি পাশ করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখানে তিনি রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনা করে বি এস এস (সম্মান) সম্পন্ন করেন। শিক্ষা জীবনে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর ক্রিকেটের সাথে ছিলো নিবিড় সম্পর্ক।
পড়াশুনা শেষ করে তিনি ১৯৮৭সালে প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথপুর কলেজ বর্তমানে জগন্নাথপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজে রাস্ট্র বিজ্ঞানের প্রথম প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। অত্যন্ত বিনয়ী নম্্র স্বভাবের এই কৃতি ব্যক্তিত্ব জাহাঙ্গীর চৌধুরী দীর্ঘ ১০বছর স্বনামের সাথে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন। একজন আদর্শ ও নীতিবান শিক্ষক হিসেবে স্বনাম কুড়িছেন প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী। পরবর্তীতে বিবাহ বন্ধনের সুবাদে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান মহান এই শিক্ষক। শৈশব এবং কৈশর জীবন থেকে খেলাধূলার প্রতি ছিল আগ্রহ।
বিশেষ করে ক্রিকেট খেলার প্রতি মনযোগী ছিলেন তিনি। মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে যেমন স্বনাম ছিল তেমনি ক্রিকেট সহ বিভিন্ন খেলাধূলায় ছিল যথেষ্ঠ স্বনাম। শিক্ষকতা পেশায় এসেও তিনি শিক্ষা জীবনের কৃতিত্ব ধরে রাখতে ক্রিকেট এবং ক্রীড়াঙ্গনের ফেলা আসা স্মৃতিময় দিনগুলিকে মানুষের হৃদয়ে জাগ্রত রাখার প্রত্যয়ে কলেজ শিক্ষার্থীদের ক্রিকেট সহ বিভিন্ন খেলাধূলায় প্রেরনা যুগিয়েছেন।
তখনকার সময়ে জগন্নাথপুরে ক্রিকেট খেলার প্রচলন ছিলনা। উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে ক্রিকেট খেলার প্রতি আগ্রহ সৃষ্ঠিতে নিজ কর্মস্থলের কলেজ শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রেরণা যুগিয়েছেন। জগন্নাথপুরে ইতিহাসের প্রথম জগন্নাথপুর কলেজের বিশাল মাঠে কলেজ শিক্ষার্থীদের দিয়ে ক্রিকেট খেলার সূচনা করেন প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী। জনপ্রিয় এই ক্রিকেট খেলা পরবর্তীতে ১৯৯২সালে কলেজ মাঠে ফারুক চৌধুরী গোল্ডকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজক ছিলেন জাহাঙ্গীর চৌধুরী। ৩টি টিমের অংশ গ্রহনে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে জগন্নাথপুর কলেজ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ক্রিকেট অঙ্গনের প্রিয় ব্যক্তিত্ব ৬৫ বছর বয়েসী জাহাঙ্গীর চৌধুরীর সংসারে স্ত্রী ছাড়াও ২ ছেলে রয়েছেন। তারা যুক্তরাজ্যে উচ্চ শিক্ষায় অধ্যায়নরত রয়েছেন। জাহাঙ্গীর চৌধুরী নর্থ লন্ডনে বসবাস করলেও মাতৃভূমির নিজ উপজেলা গ্রাম এবং শিক্ষকতা জীবনের জগন্নাথপুর কলেজের প্রতি রয়েছে অকৃতিম ভালোবাসা। শিক্ষকতা জীবনের স্মৃতিময় কলেজ এবং সেই সময়কার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রতি রয়েছে হৃদয়ের টান।
বর্তমানে সুদূর যুক্তরাজ্যে থেকেও প্রাণের টানে, জগন্নাথপুর ক্রিকেটের মায়ায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন তিনি। জগন্নাথপুর ক্রিকেটের প্রতি মায়া, ভালোবাসা এবং জগন্নাথপুরে ক্রিকেটের গোড়াপত্তন করায় প্রভাষক জাহাঙ্গীর চৌধুরী জগন্নাথপুর ক্রিকেটের এক জীবন্ত কিংবদন্তি। জগন্নাথপুরে ক্রিকেট খেলার শুরু থেকে আজ অবধি যার অবদান চলমান রয়েছে, ভবিষ্যতেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস।
আজ প্রায় আড়াই যুগ পর জগন্নাথপুর ক্রিকেটের এই দীক্ষাগুরুর নামে প্রভাষক জাহাঙ্গীর চৌধুরী গোল্ডকাপ টি-১০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলা ক্রিকেট এসোসিয়েশনের আয়োজনে ও সাবেক ক্রিকেটার আবু জুবের, আব্দুল মতিন লাকি, শাহিন চৌধুরী, ইমরুল হক হীরক, নিজাম সোবহান, রবিউল আলম নানু, তাজিম উল্ল্যা, রোমেন রহমান, জুনেদ তালুকদার, সুজাত উল্ল্যাহ মিফতাহ, শিমন চৌধুরী, হাসান আহমদ, লিয়াকত আলী লেবু, জয়নাল মিয়া, মাসুম আহমেদ, সুহেল মাহমুদ, আনন্দ দাশ, আব্দুল গফুর, ইকবাল হোসেন, মুস্তাক মাসুদ তায়েফ, শামসুল ইসলাম রাজন এর সৌজন্যে রবিবার ( ২১ নভেম্বর) সকাল ১০টায় জগন্নাথপুর কলেজ মাঠে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে। জগন্নাথপুর উপজেলা ক্রিকেট এসোসিয়েশনের সভাপতি তফজ্জুল হক সুমন ও সাধারন সম্পাদক সুবল দেব-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে বর্ণিল সাজে সাজানো মাঠে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করবেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিদ্দিক আহমদ। জাহাঙ্গীর চৌধুরী গোল্ডকাপ টি – ১০ এর অন্যতম সমন্বয়কারী আব্দুল মতিন লাকী বলেন, জগন্নাথপুরে যার হাত ধরে আমাদের ক্রিকেটের হাতেখড়ি সেই জাহাঙ্গীর স্যার কে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যেই আমাদের এই প্রয়াস। আবু জুবের বলেন, জগন্নাথপুর ক্রিকেটের ফাউন্ডার হিসেবে জাহাঙ্গীর চৌধুরী আমাদের গর্ব। তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনই আজকের এই টুর্নামেন্টের আয়োজন। অন্যতম সমন্বয়কারী ইমরুল হক হীরক বলেন, নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের কাছে জগন্নাথপুর ক্রিকেটের পুরোধা জাহাঙ্গীর চৌধুরীকে তুলে ধরা এবং নতুনদের উৎসাহ প্রদানে এই উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। সমন্বয়কারী শাহীন চৌধুরী জগন্নাথপুর উপজেলা ক্রিকেট এসোসিয়েশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জগন্নাথপুরে ক্রিকেটের প্রচলনকারী জাহাঙ্গীর চৌধুরী জগন্নাথপুর ক্রিকেটের একজন জীবন্ত কিংবদন্তী। যার প্রচেষ্ঠায় এলাকায় ক্রিকেট শুরু এবং আজ অবদি যার অবদান অব্যাহত। জাহাঙ্গীর চৌধুরী গোল্ডকাপের অন্যতম সমন্বয়কারী রবিউল আলম নানু বলেন, দেশের জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট জগন্নাথপুরে শুরু হয় জাহাঙ্গীর চৌধুরীর হাত ধরে। তার সম্মানার্থে টি-১০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করার জন্য জগন্নাথপুর উপজেলা ক্রিকেট এসোসিয়েশন কে ধন্যবাদ জানান এবং নতুন প্রজন্মকে খেলাধুলার মাধ্যমে মানসিক বিকাশের প্রতি গুরত্বারোপ করেন। জগন্নাথপুর উপজেলা ক্রিকেট এসোশিয়েশনের সভাপতি তফজ্জুল হক সুমন বলেন, আমাদের জগন্নাথপুর ক্রিকেট ইতিহাসের জীবন্ত কিংবদন্তী শ্রদ্ধেয় জাহাঙ্গীর চৌধুরী স্যারের নামে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পেরে আমরা ধন্য। সকল স্পন্সরদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি সকলকে মাঠে এসে খেলা দেখার আহবান জানান।
জগন্নাথপুর উপজেলা ক্রিকেট এসোশিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুবল দেব বলেন, আমরা নতুন প্রজন্ম জাহাঙ্গীর স্যারকে জেনেছি আমাদের সিনিয়রদের কাছ থেকে। যিনি আমাদের এলাকায় শুরু করেছেন ক্রিকেট খেলা, ক্রিকেটের এ দীক্ষাগুরুর প্রতি আমরা সবসময় কৃতজ্ঞ। উনার নামে টি-১০ টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত।