দোয়ারাবাজার প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে নির্বাচনোত্তর সহিংসতার ঘটনায় উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের বালিউরা বাজার পার্শ্ববর্তী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। শনিবার সকাল পৌণে ১০টা থেকে দুপুর পৌণে ১২টা পর্যন্ত ২ ঘন্টা স্থায়ী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ অন্তত ৪০জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ৫৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৩ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
দুপরে ছাতক-দোয়ারাবাজার জোনের এএসপি (সার্কেল) বিল্লাল হোসেন, দোয়ারাবাজারের উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাংশু কুমার সিংহ, দোয়ারাবাজার থানার ওসি দেবদুলাল ধর ও ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ঘটনাস্থলে ছাতক-দোয়ারাবাজারের পুলিশের দুটি টিম ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ধ্যা অবধি বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে নরসিংপুর ইউনিয়নের বালিউরা মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলাকালে মেম্বার পদপ্রার্থী আব্দুল হেকিম ও মতিউর রহমানের সমর্থকদের সংঘর্ষে প্রার্র্থীসহ ১০জন আহত হন। এরই জের ধরে আজ শনিবার সকাল পৌণে ১০টায় স্থানীয় বালিউরা বাজারের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে নৌকারভাঙা ও চৌমুহনী সড়কের মোড়ে ইট-পাটকেল ও দেশিয় অস্ত্রসন্ত্র নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দু’পক্ষের শ’শ’ লোক। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল ও বাঁশের এলেঙ্গাসহ দেশিয় অস্ত্রের ছোঁড়াছুঁড়ি আর ঝনঝনানি।
পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে সটকে পড়েন ব্যবসায়ীসহ বাজারের লোকজন। দীর্ঘ পৌণে ২ ঘন্টা তুমুল সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে ৫৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৩ রাউন্ড টিআরসেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি দেবদুলাল ধর বৃহস্পতি ও শনিবারের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, মূলত ১১ নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয়ের জ্বালা সইতে না পেরে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত দুই প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী এনপিপন্থি সাবেক চেয়ারম্যান সামছুল হক নমু ও আ.লীগের বিদ্রোহী নুরুল আমীনের সমর্থিত ক্ষুব্দ লোকজন ওই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। উভয়ের বাড়ি পাশাপাশি গ্রামে। ১১ নভেম্বরের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মাত্র ২২ ভোটের ব্যবধানে সামছুল হক নমু নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন আহমদের কাছে দ্বিতীয়বারের মতো পরাজিত হন। ওইদিন উপরোক্ত দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনায়ও পরাজিত ওই দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে এলাকাজুড়ে জনশ্রুতি রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত নির্বাচনেও ধানের শীষ নিয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থী নুর উদ্দিনের কাছে হেরে যান। আর নৌকা প্রতীকে দ্বিতীয়বারের মতো নুর উদ্দিন আহমদও বিজয়ী হন।