ডেস্ক রিপোর্টঃ
রিসোর্টকাণ্ডের পর থেকেই মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় অবস্থান করছিলেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক। মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে থাকতেন তিনি। প্রথমদিকে দুই-একবার বের হয়ে দলীয় মিটিংয়ে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর মনোভাব বুঝতে পেরে পরে আর মাদ্রাসা থেকে বের হননি। মাদ্রাসায় অবস্থান করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছিলেন তিনি।
আইনশৃঙ্খলা বাহনীর কর্মকর্তারা জানান, তারা অপেক্ষায় ছিলেন মামুনুল হকের মাদ্রাসা থেকে বের হওয়ার। সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যেই রাখা হয়েছিল তাকে। এর মধ্যে হেফাজতের মধ্যম সারির একাধিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। যাতে মামুনুল হক গ্রেফতার হলে কেউ মাঠে নেমে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মামুনুল হকের মাদ্রাসা থেকে বের হওয়ার অপেক্ষা করলেও রবিবার (১৮ এপ্রিল) তাকে মাদ্রাসা থেকেই গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে মাদ্রাসায় কতজন শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন সেই তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় মামুনুল হকের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এরপরই পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তাসহ গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিম তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালান।
অভিযানে অংশ নেওয়া গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মাদ্রাসার গেটে সার্বক্ষণিক পাহারা বসিয়েছিলেন মামুনুল হক। পুলিশের শতাধিক ফোর্স নিয়ে তারা মাদ্রাসায় গেলে প্রথম দিকে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অভিযানের মুখে পিছু হটেন তারা। পরে মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলায় মামুনুল হকের কক্ষে গিয়ে তাকে পুলিশের সঙ্গে যেতে বলেন। তিনি নিজেও বুঝতে পারেন বাঁধা দিয়ে কোনও লাভ হবে না। তাই স্বেচ্ছায় হেঁটে গাড়িতে ওঠেন তিনি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ন কমিশনার মাহবুব আলম জানান, মামুনুল হক ২০১৩ সালের সহিসংসতা এবং সাম্প্রতিক সহিসংসতেও নিজে সম্পৃক্ত ও উসকানি দিয়েছেন। তাকে প্রথমে পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আগামীকাল সোমবার (১৯ এপ্রিল) আদালতে পাঠানো হবে।
পুলিশ জানায়, মোদিবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এই তাণ্ডবের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে নেপথ্যে ছিলেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মোদিবিরোধী বিক্ষোভের পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথমে একাধিক মামলা করলেও তাতে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের নাম ছিল না। তবে ৩ এপ্রিল এক নারী সঙ্গীসহ নারায়ণগঞ্জের সোনরাগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টে স্থানীয় জনতার হাতে আটক হওয়ার পর হেফাজতকে কোণঠাসা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরই রাজধানীর মতিঝিল ও পল্টন থানায় নতুন করে হওয়া একাধিক মামলায় মামুনুল হকসহ হেফাজতের একাধিক শীর্ষ নেতাকে আসামি করা হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে হেফাজতের প্রায় ৮ কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গত ১১ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলামাবাদী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াসকে গ্রেফতার করা হয়, এরপর ১৩ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহ, ১৪ এপ্রিল সহকারী মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি ও কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) মাওলানা যুবায়ের আহমেদ ও শনিবার (১৭ এপ্রিল) মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ নামে হেফাজতের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।