তাহিরপুরের শিমুল বাগানে বসন্ত - ভালবাসায় রক্তরাঙা মিলনমেলা

 



আমির হোসেন,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::

বসন্ত আর ভালবাসায় রক্তরাঙা শিমুল বাগানে মিলনমেলা জমে উঠেছে। পয়েলা ফালগুন আর  ভালবাসা দিবসে বাগানে হাজােরা দর্শনার্থী ভিড় করেন। এবার শিমুল ফুল যদি একটি গাছেও ফোটে সেটি মেঘালয় পাহাড় ঘেষা যাদুকাটা নদীর তীরে 'জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানে' ফুটে উঠেছে। অন্যান্য বছর নির্ধারিত সময়ের একটু আগে বা পরে ফুল ফুটলেও এবার তার আপন মহিমায় ফুল ফুটেছে। ডালে ডালে ফুটে থাকা হাজারো ফুল পর্যটক প্রেমিদের মনকে রাঙিয়ে তুলেছে। সারি সারি বাগানের রক্ত রাঙা ফুল চোখে পড়েছে এবার অনেক দূর থেকেই। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগানে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত হাজারো পর্যটক প্রেমী জড়ো হয়েছেন শিমুল বাগানে। কেউ এসেছেন প্রেমিকা নিয়ে, কেউ এসেছেন পরিবার - পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। এযেনো ভালবাসা দিবসকে আজ পূর্নরূপ এবং বসন্তে বাউলের মন রাঙিয়েছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি গাছে ফুটে  থাকা লাল পাঁপড়ি দেখে পর্যটকপ্রেমিরা আনন্দে মেতে  উঠেছেন। মায়াময় বাগানে জমে উঠে শিমুল মায়ার খেলা। লাল ফুলের গালিচা বিছিয়ে রয়েছে শিমুল বাগানে। জানা যায়, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর  বড়দল ইউনিয়নের যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী মেঘালয়  পাহাড় ঘেঁষা মানিগাওঁ গ্রাম সংলগ্ন ১০০ বিঘা জমি জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল এক শিমুল বাগান।  নদীর ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে মায়ার নদী যাদুকাটা আর এপারে রক্তিম ফুলের সমারোহ।  ২০০২ সালে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি  চেয়ারম্যান বৃক্ষপ্রেমী প্রয়াত জয়নাল আবেদীন নিজের  প্রায় একশো বিঘা জমিতে শৌখিনতার বসে প্রায় তিন হাজার শিমুল গাছ রোপণ করেন। ক্ষনে ক্ষনে বেড়ে ওঠা গাছগুলো এখন হয়ে উঠেছে সারা দেশে পরিচিত এক শিমুল বাগান। বসন্তে শিমুল গাছগুলোতে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। ফাগুনের অরুণ আলোয় ফুটেছে বাগানের রক্তরাঙা ফুল। চোখের তৃষ্ণা মেটাতে ফুটে ওঠা টুকটুকে লাল ফুলগুলো দেখতে ছুটে এসেছেন হাজারো দর্শনার্থী। আমেরিকা প্রবাসি সিলেট থেকে বাগান দেখতে আসা রিপা চৌধুরী জানান, দেশে এতো বড় শিমুল বাগান রয়েছে, নিজের  চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। সারা বছর অপেক্ষায় ছিলাম ফাগুন আর ভালবাসা দিবসে এক সঙ্গে রক্ত রাঙা ফুল দেখবো। ফুলের পাঁপড়ি দেখে আজ স্বপ্ন পূরন হয়েছে। তিনি বলেন, বাগানের আশপাশে যদি ভাল রিসোর্ট এবং যাতায়াতের ব্যবস্হা ভাল হতো তাহলে আরো পর্যটকের সমারোহ হতো। স্কুল শিক্ষিকা প্রিয়াংকা বলেন, এখানে এসে রক্ত রাঙা শিমুল ফুল দেখে মনটা ভরে গেছে। প্রতি বছর আগ্রহে থাকি এইদিনটির জন্য। সবাই এক সঙ্গে এসে মিলে মিসে উপভোগ করি। বাগানের মালিক প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব  জয়নাল আবেদীনের ছেলে রাখাব উদ্দিন জানান, এবার সঠিক সময়েই বসন্তে শিমুল গাছগুলোতে এক সঙ্গে ফুল ফুটেছে। এই শিমুল বাগান তার মরহুম পিতার পরিচয় আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, এখানে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ভলান্টিয়ার এবং পুলিশের নজরদারি রয়েছে। এদিকে শিমুল বাগানে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিতে উৎসবের আয়োজন করে জেলা শিল্পকলা একাডেমি । দিনব্যাপী কবিতা, নৃত্য ও গানের মধ্যে দিয়ে বসন্তকে বরণ করা হয়। উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমেদ সিদ্দিকী, জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো.এহসান শাহ, তাহিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন প্রমুখ।

*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন