সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় যৌতুকলোভী শিক্ষক স্বামী মৃদুল চন্দ্র সরকার কর্তৃক স্ত্রী চম্পা রানী দাসকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত স্বামী মৃদুল চন্দ্র সরকার,ভাসুর মুকুল চন্দ্র সরকার ও শ্বাশুড়ি প্রেমলতাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায়,সুনামগঞ্জের নাগরিক সমাজ,জেলা মহিলা পরিষদ ও শাল্লা সমিতির ব্যানারে সুনামগঞ্জের ট্রাফিক পয়েন্টে এ মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেনীপেশার লোকজন অংশগ্রহন করেন।
মহিলা পরিষদের সভানেত্রী গৌরি ভট্রাচার্য্যর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে এ সময় বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ পৌর ডিগ্রি কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ও কৃষক নেতা চিত্তরঞ্জন তালুকদার,মহিলা পরিষদের সহ সভাপতি সঞ্চিতা চৌধুরী,সোনালী ব্যাংকের প্রাক্তন ম্যানেজার যোগেন্দ্র চন্দ্র দাস,চম্পার জেঠিমা নমিতা চৌধুরী,জেঠু রমেন্দ্র চৌধুরী,এড. মতিয়া বেগম,শাল্লার মৃণাল কান্তি চৌধুরী,সুনামগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ও মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি কুলেন্দু শেখর দাস,জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শোয়েব চৌধুরী,ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি সুব্রত সরকার,মহিলা পরিষদের আন্দোলন সম্পাদক অমিতা রায়,শাল্লা সমিতির সভাপতি তাপস রঞ্জন দাস,চন্দন আচার্য্য,মহিলা পরিষদের সদস্য রুবী রানী দাস,নিহত চম্পার বড়ভাই নীলকণ্ঠ দাস,মুহিত ভট্রাচার্য্য,নিহতের ছোটভাই নিহার চন্দ্র দাস প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,নিহত চম্পার গ্রেপ্তারকৃত যৌতুকলোভী ঘাতক স্বামী মৃদুল চন্দ্র সরকার, পলাতক ভাসুর মুকুল চন্দ্র সরকার ও শ্বাশুড়ি প্রেমলতাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন হবে। অবিলম্বে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে ফাসিঁর রায় কার্যকরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,স্বরাষ্ট্রমস্ত্রী ও পুলিশ সুপারের নিকট জোর দাবী জানান। একটি অপরাধ করে অপরাদিরা পাড় পেয়ে গেলে আগামীতে সমাজে আরো দশটি অপরাধ সংগঠিত হবে বলে মনে করেন তারা।
মানববন্ধনে বক্তারাে আরো বলেন, মৃদুল চন্দ্র সরকার সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের শেওড়া পাটকুড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে দাওরাই বাজারে এক ভাড়া বাসায় স্ত্রী চম্পাকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। যৌতুকলোভী স্বামী মৃদুল চন্দ্র সরকার তার কর্মস্থল জগন্নাথপুর উপজেলা শহরে জায়গা কিনবে বলে স্ত্রী চম্পা রানী দাসকে বাবার বাড়ি হতে যৌতুক বাবত ১০ লাখ টাকা এনে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। চম্পা স্বামী কর্তৃক প্রতিনিয়ত নির্যাতনের কথাটি চম্পা তার ছোটভাই নিহারকে জানানোর পর নিহার ২০২১ সালের ১৪ই অক্টোবর সিলেট সোনালী ব্যংক শাখার মাধ্যমে এক লাখ ৫ হাজার টাকা মৃদুলকে চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। বিয়ের ছয়মাসের ভেতরে চম্পাকে প্রতিদিন ঘরের ভেতরে দরজা আটকিয়ে রেখে বাহিরে তালা ঝুলিয়ে সকালে মৃদুল তার কর্মস্থল স্কুলে যেতেন এবং বিকেল বেলা বাসায় এসে দরজার তালা খুলে ঘরে প্রবেশ করে তাকে চালানো হতো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্ট্রীম রোলার। এভাবে নিহত চম্পা রানীর স্বামী মৃদুল চন্দ্র সরকার,ভাসুর একই উপজেলার ইসহাকপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুকুল চন্দ্র সরকার ও শ্বাশুড়ি প্রেমলতা সরকার কর্তৃক বাকি যৌতুকের টাকা বাবার বাড়ি হতে এনে দিতে গৃহবধূ চম্পার উপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হতো।
ঘটনার দিন গত ১৬ই এপ্রিল সকালবেলা স্বামী মৃদুল চন্দ্র সরকার স্কুলে যাওয়ার আগে চম্পাকে বালিশ চাপা দিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ঘরের শিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখে ঘরের বাহিরে তালা ঝুলিয়ে তিনি স্কুলে চলে যান। বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে তিনি স্কুল থেকে বাসায় এসে দরজা খুলে চম্পার বাবার বাড়ির লোকজনকে ফোনে খবর দেন চম্পা আত্মহত্যা করেছেন। তাৎক্ষনিক চম্পার ভাই নিহারসহ স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিলিং ফ্যানের সাথে চম্পার ঝুলন্ত লাশ দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। এ সময় আশাপাশের লোকজন এসে জগন্নাথপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনান্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রির্পোট তৈরী করে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক এর হিমাগারে রাখা হয়। । এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ঘটনার রাতেই ঘাতক স্বামী শিক্ষক মৃদুল চন্দ্র সরকারকে গ্রেপ্তার করেন। গত ১৭ এপ্রিল লাশের ময়না তদন্তের জন্য দুপুরে চম্পার মরদেহ সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসার পর লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়।
এ ঘটনায় নিহত চম্পা রানী দাসের ছোটভাই নিহার চন্দ্র দাস বাদি হয়ে গত ১৭ই এপ্রিল বোনের ঘাতক স্বামী ও যৌতুকলোভী শিক্ষক মৃদুল চন্দ্র সরকারকে প্রধান আসামী করে তার ভাসুক ইসহাকপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুকুল চন্দ্র সরকার ও শ্বাশুড়ি প্রেমলতা সরকারকে আসামী করে জগন্নাথপুর থানায় একটি আত্মহত্যার চেষ্টার প্ররোচনা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৭,তারিখ ১৭/-৪/২০২২ ইং
উল্লেখ্য গত ২০২১ সালের ৩রা অক্টোবর সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার বাহারা ইউনিয়নের আঙ্গারুয়া গ্রামের নিখিল চন্দ্র দাসের মাষ্টার্স পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে চম্পা রানী দাসের সাথে নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের মৃত যামিনী সরকারের তৃতীয় ছেলে শিক্ষক মৃদুল চন্দ্র সরকারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পরপরই স্ত্রী চম্পা রানী দাসকে নিয়ে তার কর্মস্থল জগন্নাথপুরে এসে এক ভাড়া বাসায় দিনযাপন করে আসছিলেন। ##
সুৃনামগঞ্জ প্রতিনিধি
২২.০৪.২০২২