রিপোর্টঃ আমিনুর রহমান জিলু
একটি বাড়ি একটি খামার, রক্ষা করবে বাংলাদেশ সরকার, এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সারাদেশের ৬৪ টি জেলার খামারীদের নিয়ে ৬ দফা দাবিতে- ২ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে বাংলাদেশ প্রান্তিক পোল্ট্রি শিল্প সংগঠন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন- ২৫ হাজার কোটি টাকার এই পোল্ট্রি শিল্প, ৬০ লাখ খামার ও প্রায় তিন কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত এই শিল্পে। তাদের রুটি রুজি আহার সবি চলে এখান থেকে। এতোবড় একটি শিল্পে সরকারি কোনো নীতিমালা না থাকায়, প্রান্তিক খামারীদের রক্তচুষে কয়েকটি এগ্রো কোম্পানি তাদের নিজেদের ইচ্ছেমতো বাচ্চা খাদ্য ও মুরগীর দাম নির্ধারণ করে। যার কারণে দেশের প্রান্তিক খামারীরা মাসের পর মাস হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও আলোর মুখ দেখতে পাননা। এতে দেশের বেশিরভাগ প্রান্তিক খামার বন্ধ থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে গোটা পোল্ট্রি শিল্প।
তারা আরো বলেন- কোম্পানি খামারিদের কাছে বাচ্চা ও খাদ্য বিক্রি করে পাশাপাশি তারা নিজেরাও লাখ লাখ রেডি মোরগের খামার করে একসাথে বিক্রি করে যখন-ঠিক তখনই খামারীরা লসের শিকার হন। হিসেব করলে দেখা যায় একটি ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করতে কোম্পানির সর্বোচ্চ ১৫ টাকার মতো খরচ হয়, এই বাচ্চা তারা খামারিদের কাছে বিক্রি করে ৬০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। ৫০ কেজি ব্রয়লার খাদ্য উৎপাদন করতে কোম্পানির সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা খরচ হয়! সেই খাদ্য তারা খামারিদের কাছে বিক্রি করেন ২৭৫০ টাকা থেকে ২৮৫০ টাকা। যার কারণে কোম্পানি খামারিদের থেকে ব্রয়লার মোরগ কেজি প্রতি ৪০ টাকা কমে বিক্রি করলেও তারা লাভবান থাকে! অন্যদিকে প্রান্তিক খামারীরা কেজি প্রতি কোম্পানি থেকে ৪০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করেও লসের শিকার হন। ১০০০ ব্রয়লার মোরগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়।
(১) কোম্পানিঃ বাচ্চা উৎপাদন খরচ ১৫×১০০০ = ১৫,০০০ টাকা, খাদ্য উৎপাদন খরচ ৪০×২০০০ = ৮০,০০০ টাকা, ঔষধ, লিটার, লেবার ও কারেন্ট বিল ১২,০০০ টাকা, কোম্পানির মোট খরচ দাঁড়ায় ১০৭,০০০ টাকা, মাংস উৎপাদন মোট ১৩৫৮ কেজি, পাইকারি কেজি ১৩০ টাকা, বিক্রি দাঁড়ায় ১৩০×১৩৫৮ = ১৭৬,৫৪০ টাকা, ১০০০ বাচ্চায় ৫৯,৫৪০ টাকা লাভ করে কোম্পানি। (২) খামারীঃ বাচ্চা উৎপাদন খরচ ৬০ × ১০০০ = ৬০,০০০ টাকা, খাদ্য উৎপাদন খরচ ৪০ × ২৮০০ = ১১২,০০০ টাকা ঔষধ, লিটার, লেবার ও কারেন্ট বিল ১৫,০০০ টাকা, খামারীর খরচ দাঁড়ায় ১৮৭,০০০ টাকা, মাংস উৎপাদন মোট ১৩৫৮ কেজি, পাইকারি কেজি ১৩০/- বিক্রি দাঁড়ায় ১৩০ × ১৩৫৮ = ১৭৬,৫৪০ টাকা, ১০০০ বাচ্চায় ১০,৪৬০ টাকা লোকসান করেন খামারী। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রান্তিক পোল্ট্রিশিল্প সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটি চেয়ারম্যান মোঃ মফিজুল ইসলাম মল্লিক খাগড়াছড়ি জেলা শাখা, কাজী মোস্তফা কামাল কার্যকরী সভাপতি কুমিল্লা জেলা, ফয়জুর রহমান সহ-সভাপতি সুনামগঞ্জ জেলা, সালাউদ্দিন আহমেদ যুগ্ন মহাসচিব চট্টগ্রাম জেলা, বক্তব্য রাখেন মানিক হাসান যুগ্ন মহাসচিব নারায়ণগঞ্জ জেলা, আশরাফুল ইসলাম প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ময়মনসিং জেলা, সোহেল মিয়া তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, আনিসুর রহমান কৃষি বিষয়ক সম্পাদক কুড়িগ্রাম জেলা। পরে ছয় দফা দাবি ঘোষণা করেন মামুনুর রহমান পলাশ মহাসচিব কিশোরগঞ্জ জেলা।
পোল্ট্রি খাদ্য ও ১ দিনের বাচ্চার লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশে ব্রয়লার, লেয়ার, সোনালি, হাস, ব্রিডার, দেশী মুরগী সহ অন্যান্য ছোট বড় প্রায় ৬০ লাখ খামার রয়েছে। খাদ্য ও বাচ্চার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে লোকশান গুনতে গুনতে নিঃস্ব হচ্ছেন দেশের লাখ লাখ খামারী। জমি জমা, বাড়ি ঘর বিক্রি করেও ডিলারের ঋন পরিশোধ করা যাচ্ছেনা বলেও জানা যায়। একারণে দেশের বেশিরভাগ খামার বন্ধ থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে গোটা পোল্ট্রি শিল্প। অন্যদিকে দেশের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে উৎপাদন ঘাটতি আর পরিবহন সংকটের অজুহাতে দফায় দফায় পোলট্রি খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকটি খাদ্য ও বাচ্চা উৎপাদনকারী (সিণ্ডিকেট) প্রতিষ্ঠান। এর ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন পোল্ট্রি খামারিরা। বিগত কয়েক মাসে লোকসানের বোঝা টানতে না পেরে বন্ধ রয়েছে লাখ লাখ পোল্ট্রি খামার। এ শিল্পে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। খামার মালিকরা জানান বাচ্চা লালন পালন করতে যে টাকা খরচ হয় বিক্রি করে সে টাকাই উঠছে না। উল্টো জমি জমা বাড়ি ঘর বিক্রি করে ডিলারের টাকা পরিশোধ করতে হয়। সমাবেশ শেষে রাজধানীর কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন খামারীরা। মিছিল শেষে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ প্রান্তিক পোল্ট্রি শিল্প সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম মল্লিক।
তাদের ৬ দফা দাবিগুলো হলো
দাবি ১.
খাদ্যের মান বৃদ্ধি করে ব্রয়লার ৫০ কেজি প্রতি বস্তা খাদ্যের দাম- ২০০০ থেকে ২১০০ টাকা, লেয়ার ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকার মধ্যে রাখতে হবে। দাবি ২. ব্রয়লার ও লেয়ার সকল প্রকার মুরগির বাচ্চার দাম বাৎসরিক ভাবে ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে রাখতে হবে এবং বাচ্চার মান বৃদ্ধি করতে হবে। দাবি ৩. খাদ্য ও বাচ্চা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো তারা নিজেরা খাদ্য বাচ্চা উৎপাদন করে খামারিদের কাছে বিক্রি করে এবং নিজেরা ব্রয়লার ও লেয়ার সহ সকল প্রকার রেডি মুরগি উৎপাদন করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, তাই খামারিরা ধ্বংসের পথে সেই ক্ষেত্রে কোম্পানিদের রেডি মুরগি উৎপাদন করা বন্ধ করতে হবে। দাবি ৪.আমরা প্রণোদনার টাকা চাইনা, আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বিনীতভাবে অনুরোধ থাকবে বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় ৩০০ জন নিবন্ধিত খামারীকে স্বল্প সুদে সহজ শর্তে প্রতি ১০০০ মুরগি পালনকারী খামারীকে কমপক্ষে ২ লক্ষ টাকা ঋণ দিতে হবে।
দাবি ৫. প্রতি একজন খামারি দশ হাজার মুরগির উপরে কোন প্রকার রেডি মুরগি উৎপাদন করতে পারবে না।