লিখেছেন, আমিনুল হক সিপন
ইয়া বড় জঙ্গল। জঙ্গলের একদিকে দিকে গেলে আরেক দিকের রাস্তা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অনেক রকম হিংস্র ও নিরীহ প্রাণীর বাস । তবে ওখানে হিংস্র প্রাণীর ভয়ে নিরীহ প্রাণী গুলো বরাবরই আতংকে।
তাই কতগুলো নিরীহ প্রাণী জঙ্গলের এক প্রান্তে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নেয়। শিয়াল,বানর,হরিণ,জেব্রা,গাধা,খরগোস, বন মোরগ খুব সুখে জীবন-যাপন করতে থাকে। ভাগ্যে যখন যা জুটে- তা নিয়ে তারা যথেষ্ট খুশি।
তবে কখনো কখনো দু' একটা হিংস্র প্রাণী তাদের নতুন বাসস্থানে হানা দেয়। সবাই মিলে প্রতিহত করে। এক্ষেত্রে শিয়ালের বুদ্ধি আর বানরের নানাবিধ কৌশল হিংস্র প্রাণীদের বড় ধরনের বাধা।
তো বহিঃ শত্রুর আক্রমণ থেকে টিকে থাকতে হলে নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ- সুদৃঢ়, একতা ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধির প্রয়োজন।তাই এখানে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।বিশেষ করে দুর্বল প্রাণী গুলো রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে উদগ্রীব । কিন্তু রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হলে একজন রাজার প্রয়োজন। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হরিণ, জেব্রা, বন মোরগ মিলে গোপনে সিদ্ধান্ত নেয় একটি বোধসম্পন্ন বয়স্ক বানরকে এ রাজ্যের রাজা বানাতে হবে।
কারণ বানরের কতগুলো গুণ রয়েছে।
কিন্তু একটি চতুর শিয়াল আড়াল থেকে সব শুনছিল। শিয়াল মনে মনে ভাবলো- তাকে যেভাবে হোক এখানকার রাজা হতে হবে। তাই সে নানাবিধ বুদ্ধি আঁটলো।
অতঃপর সে কতগুলো হরিণ-কে গিয়ে বললো- বানরেরা গাছে উঠে কত ধরনের ফল-ফুল খায়; কিন্তু তোমাদের তো কিছুই দেয়না। চাইলে তো তোমাদেরকে কিছু দিতে পারতো। অথচ তোমরা কত কষ্ট করে গাছের নীচ থেকে খুঁড়িয়ে খাও।
কথা শুনে হরিণদের মনে বানরদের নিয়ে সন্দেহের দানা বাঁধলো।
এবার সে বন মোরগদের গিয়ে বললো, গাছের ফলে- ফুলে কত ভালো ভালো পোকা মাকড়ের বাস। বানরেরা চাইলে তো তোমাদের দিতে পারতো। কিন্তু তারা শুধু ফল খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত।
অথচ তোমরা কত কষ্ট করে জঙ্গলের এ মাথা থেকে সে মাথায় গিয়ে খাওন সংগ্রহ করো, কখন না হিংস্র প্রাণীদের থাবায় তোমাদের কারো প্রাণ যায়।
বন মোরগগুলো ভাবলো- সত্যিই বানরেরা বড় স্বার্থপর।
এবার জিরাফদের গিয়ে বললো, অ্যাকাশিয়া পাতা তোমাদের খুব প্রিয় খাদ্য। কিন্তু তোমরা গাছে উঠতে পারোনা, বড় দুঃখ। চাইলে তো বানরেরা তোমাদের দু'চারটি ডাল ভেঙে দিতে পারতো।
জিরাফ গুলো ভাবলো, শিয়াল তো সত্যিই বলেছে।
শিয়াল এভাবে এক এক প্রাণীর দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের ব্রেইন ওয়াশ করতে থাকে। সব প্রাণী গুলো বিষিয়ে ওঠে বানরদের ওপর।
অতঃপর শিয়ালটি এক গাধাকে গিয়ে বললো, এখানকার পানির নীচে শুধু বালু আর বালু।
জানি, গোলা জলের অভাবে তুই বড় সমস্যায় আছিস, তোকে আমি ঘোলা জল খাওয়াবো। তবে আমার পক্ষে একটু প্রচারণা করতে হবে।
গাধা বললো, কী প্রচারণা?
শিয়াল বললো, একমাত্র বানর ছাড়া জঙ্গলের সব প্রাণীর কাছে গিয়ে আমার গুণকীর্তন করবে, বাকিটা আমি দেখবো।
চতুর শিয়ালের কথামতো গাধা একমাত্র বানর ছাড়া সব প্রাণীদের কাছে গিয়ে শিয়ালের পক্ষে প্রচারণা শুরু করে।
অতঃপর শিয়াল খরগোসকে গিয়ে বললো, কী রে খরগোস? তুই তো ছোট্ট প্রাণী। এখন যদি আমার স্বজাতি তোর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেই, তুই কী করবি বল?
খরগোস বলে, আমার অপরাধ!
শিয়াল- তোর কোনো অপরাধ নেই, তবে গাধা আমার পক্ষে জোরেশোরে প্রচারণা করছে- এমন দু'চারটি কথা গিয়ে বানরদের বলতে হবে।
কথা শুনে ভীতু খরগোস বলে, এ আর এমন কী, বলবো।
অতঃপর খরগোস গিয়ে বানরদের বলে, শিয়ালকে এ রাজ্যের রাজা বানানোর জন্য গাধা বড় উদগ্রীব। তাই সব প্রাণীর দ্বারে গিয়ে শিয়ালের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। হয়তো শিয়ালই হবে এ রাজ্যের রাজা।
কথা শুনে একদল বানর গাধার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে।
অতঃপর তারা সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বের হয়ে দেখলো- সত্যিই গাধা শিয়ালের পক্ষে প্রচারণা করছে।
অতঃপর তারা সবাই মিলে গাধার ওপরে হুমড়ি দিয়ে পড়ে ইচ্ছেমত পেটাতে থাকে ।
গাদার সুর- চিৎকারে জঙ্গলের সব প্রাণী ছুঁটে এসে দেখলো- বানরদের উচ্ছৃঙ্খল রূপ। তারা সকলে বানরদের ওপর প্রচন্ড অসন্তুষ্ট হয়ে চরম ক্ষুব্ধ।
অতঃপর তারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয় শিয়াল ই হবে এ রাজ্যের রাজা। আর বানরেরা হবে এ রাজ্যের প্রহরী।