ভূয়া ভাউচারে স্কুলের দুই লাখ টাকা আত্মসাৎ করলেন প্রধান শিক্ষিকা



সাবজল হোসাইন, তাহিরপুর প্রতিনিধিঃ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দুধের আউটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নুরুন নাহার বেগমের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্রয়ের নামে ভুয়া বিল ভাউচারে ওই প্রধান শিক্ষিকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা। 

২০১৯-২০ অর্থবছরে ও ওই প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসে। ক্ষুদ্র মেরামতের ২ লক্ষ টাকা থেকে সরকারি ভ্যাট দেয়া হয় ২৪ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ১লক্ষ ৭৬ হাজার থেকে বিদ্যালয় মেরামতে ব্যয় করা হয় ৪৮ হাজার ৩'শ ৬০ টাকা। অথচ ২ লক্ষ টাকার ভুয়া ভাউচার তৈরি করে হাতিয়ে নিলেন ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৬'শ ৪০ টাক।

এর পূর্ব ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুধের আউটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে আরো ৭০ হাজার টাকা স্লিপ গ্র্যান্ট থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়। কোনো কিছু ক্রয় না করেই ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে স্লিপ গ্র্যান্টের বরাদ্দকৃত পুরো ৭০ হাজার টাকাই আত্মসাৎ করলেন শিক্ষিকা নুরুন নাহার। স্লিপ গ্র্যান্টের ৭০ হাজার এবং ক্ষুদ্র মেরামতের ১লক্ষ ২৭ হাজার ৬'শ ৪০ টাকা। ওই দু'টি বরাদ্দ থেকে আত্মসাৎ করলেন ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ৬'শ ৪০ টাকা।

তার এমন দুর্নীতি নিয়ে সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকরা জানান, গত ২৬শে জুন ২০১৮ সালে তাহিরপুর উপজেলার ১নং উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দুধের আউটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন নুরুন নাহার বেগম। আর এ স্কুলে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। শুধু তাই নয় শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা তার অসৎ আচরণের কথাও তুলে ধরেন। 

তাহিরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাযায়, স্লিপ গ্র্যান্টের বরাদ্দকৃত ৭০ হাজার টাকার ভাউচার অনুযায়ী ১ টি বঙ্গবন্ধু কর্ণার সেলফ  ১০ হাজার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ২০টি বই ক্রয় ৫ হাজার, বায়োমেট্রিক হাজিরা ১টি ২৫ হাজার, ৩টি হোয়াইট বোর্ড ১০ হাজার, ৪টি দেওয়াল ঘড়ি ৩ হাজার ২'শ, ৪টি ফুটবল ৪ হাজার, মনিটরিং বের্ড ১টি ২ হাজার ৮'শ, না সমাবেশ ৩টি ৬ হাজার ও ৪টি জাতীয় দিবস পালনে ৪ হাজার টাকা ব্যয়ের ভুয়া ভাউচারে পুরো ৭০ হাজার টাকাই আত্মসাৎ করেন ওই শিক্ষিকা।' সরে জমিনে তার কিছুই চোখে পরেনি।

২০১৯-২০ অর্থবছরে ক্ষদ্র মেরামতের জন্য ক্রয় করা হয় ১২০ ঘনফুট বালু ৩ হাজার ৩'শ ৬০ টাকা, ১২০ ঘনফুট নুরিপাথর ১২ হাজার টাকা, সিমেন্ট ২৫ বস্তা ১০ হাজার ৫'শ টাকা, টয়লেটের একটি দরজা মেরামত ১৫'শ টাকা, রাজমিস্ত্রির বিল ১৪ হাজার টাকা ও রংমিস্ত্রির বিল ৭ হাজার টাকা।

বিপরীতে ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দকৃত ২ লক্ষ টাকার ভুয়া ভাউচারে উল্লেখ করা হয়, ৪'শ ঘনফুট বালু ১৬ হাজার, ৩৫০  ৪৯ হাজার, দরজা ৩টি ৩৬ হাজার, এ্যানামেইন্ট  ১৬ হাজার, সিমেন্ট ৮০ বস্তা ৪০ হাজার, জানালা ৫ টি ১৫ হাজার টাকা, রংমিস্ত্রির বিল ৯ হাজার ও রাজমিস্ত্রির বিল ১৯ হাজার টাকার ভুয়া ভাউচার করে আত্মসাৎ করন ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬'শ ৪০ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও যাতায়াতের নামেও অর্থ আত্মসাৎ ও পিএসসি সার্টিফিকেটের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে টাকা নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই প্রধান শিক্ষিকা ম্যানেজিং কমিটিকে এড়িয়ে সার্বিক কার্যক্রম নিজের মতো করেই পরিচালনা করেছেন বলে জানান ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। 

প্রধান শিক্ষিকা নুরুন নাহার বেগমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, ওই শিক্ষিকা আমাদের সাথে কোন রকম পরামর্শ না করেই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম করে আত্মসাৎ করেছেন প্রায় দুই লক্ষ টাকা,  চুরি ত নয় যেন পাহাড় চুরি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্দ থেকে বিদ্যালয়ের সব ক'টি কাঠের দরজা পরিবর্তন করে স্টিলের দরজা লাগিয়েছিলাম আমি নিজে দাড়িয়ে থেকে, তিনি তার ভুয়া ভাউচারে আরও ৩টি দরজা উল্লেখ করেছেন, এখন আমার প্রশ্ন হলো ৩ টি স্টিলের দরজা তিনি কোথায় লাগিয়েছেন? এতোগুলো টাকা কি করেছেন? অনেক দিন ধরে তার কাছ হিসাব চাচ্ছি ওনি হিসাব দিচ্ছেন না। 

ওই স্কুল শিক্ষিকার অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রসঙ্গে তাহিরপুর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিপ্লব চন্দ্র বলেন, প্রধান শিক্ষিকা নুরুন নাহার বেগমের দুর্নীতির বিষয়ে অনেকেই ফোন করে জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে, উপযুক্ত প্রমাণাদি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।








*

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন